ভারতের অঙ্গরাজ্য
সিকিম বাংলাদেশের সবচেয়ে
নিকটবর্তী বরফের দেশ
মার্চ এবং অক্টোবর মাস সিকিম ভ্রমণ এর সঠিক মৌসুম |
বাংলাদেশের
সবচেয়ে নিকটবর্তী বরফেরদেশ সিকিম এবং সিকিমের তিনভাগের দুইভাগ অঞ্চলে ই বরফে
ঢাকা অধিকাংশ বাঙালি কখনো তুষারপাত
ও দেখেনি, বাংলাদেশ থেকে যদি সহজে
কোন বরফের দেশে বেড়াতে যেতে চান তাহলে
আপনাকে যেতে হবে ভারতের
সিকিম’ কারণ ঢাকা থেকে
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক এর দূরত্ব মাত্র
সাড়ে 500 কিলোমিটার’ কয়েক বছর আগেও
বাংলাদেশীদের জন্য সিকিম ভ্রমণ
নিষিদ্ধ ছিল সাম্প্রতিক সময়ে
সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ার পর
থেকে বহু
বাংলাদেশের পর্যটক বেড়াতে যায়|
বাংলাদেশ সিকিমের তুলনায় প্রায় 20 গুণ বড়!
সিকিমের আয়তন 7096 বর্গকিলোমিটার |
কারণ শুধুমাত্র
শিলিগুড়ি করিডোর এর মাধ্যমেই সিকিম রাজ্যটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সাথে সংযুক্ত’ বাংলাদেশ
থেকে শিলিগুড়ি যাওয়ার সবচেয়ে সহজ উপায়ে বাংলাবান্ধা
স্থলবন্দর ব্যবহার করার কারণ বাংলাবান্ধা
বাংলাদেশের সর্ব উত্তরের বিন্দু
এবং বাংলা বন্দর থেকে
শিলিগুড়ি শহরের দূরত্ব মাত্র
15 কিলোমিটার,
সিকিম রাজ্যটি চারটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত!
শিলিগুড়ি তরাই
অঞ্চল পেরিয়ে পাহাড়ি আঁকাবাঁকা রাস্তা ধরে সিকিমে যেতে হয় সিকিম রাজ্যটি চারটি প্রশাসনিক অঞ্চলে বিভক্ত, পূর্ব সিকিম,উত্তর সিকিম,দক্ষিণ
সিকিম,পশ্চিমে সিকিম, এই চারটি জেলার জলবায়ুতে বহুবিচিত্র দেখা যায়, ঋতুভেদে সিকিমের
তাপমাত্রা সাধারণত - 5 মিনিটে থেকে 25 ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে, তবে এখানকার
সূর্য পর্বতশিখরে তাপমাত্রা - 40 ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত নেমে যেতে পারে|
সিকিমের জেলাগুলোর
মধ্যে উত্তর সিকিমের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য সবচেয়ে মনোমুগ্ধকর হিমালয় পর্বতমালার অসাধারণ
সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় উত্তর সিকিম থেকে সবগুলো জেলার মধ্যে এটি সবচেয়ে বড়, শুধু
তাই নয় এই একটি জেলার আয়তন বাকি তিনটি জেলার সম্মিলিত আয়তনের চেয়েও বড়’ রাজ্যের
সবচেয়ে বেশি তুষারাবৃত পর্বতগুলো উত্তর সিকিমে দেখা যায়|
উত্তর সিকিমে
শুধু ভারতের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ্গ নয় বরং সমগ্র পৃথিবীর তৃতীয় সর্বোচ্চ পর্বত চূড়া
কাঞ্চনজঙ্ঘার অবস্থান যার উচ্চতা 28000 ফুটেরও বেশি, সে কারণে বছরের অধিকাংশ সময় সিকিমের
পাহাড়চূড়া গুলো বরফে ঢাকা থাকে, উত্তর সিকিমের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছেন
লাচেন, লাচুন, কাটাও, ইয়ামথাং, ভ্যালি, গুরুদংমার লেক ইত্যাদি
মার্চ এবং অক্টোবর মাস সিকিম ভ্রমণ এর সঠিক মৌসুম!
চীন এবং নেপালের
সাথে সীমান্তে থাকার কারণে এবং এই অঞ্চলের পর্যটন ব্যবস্থা ভারতীয় সেনাবাহিনী দ্বারা
কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়ে থাকে’এছাড়া শীতকালে অধিক তুষারপাতের এবং বরফের এর আর্দ্রতার
কারণে অধিকাংশ জনপ্রিয় পর্যটন স্থানগুলোতে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ থাকে,
মার্চ থেকে অক্টোবর
মাস হল সিকিম ভ্রমণ এর প্রধান মৌসুমে কারণ এ সময় সিকিমের সমস্ত জায়গায় অনায়াসে
যাওয়া যায়, তবে পর্যটনের প্রধান মৌসুমে আপনি বরফে ঢাকা শ্বেতশুভ্র সৌন্দর্য থেকে
বঞ্চিত হবেন শীতকালে ঘুরে বেড়ানো খানিকটা কষ্টকর হলেও বড় দেখতে চাইলে এই সময় এর
বিকল্প নেই|
গ্যাংটকের যোগাযোগ
ব্যবস্থা!
সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক পূর্ব সিকিম জেলার অন্তর্গত গ্যাংটক শব্দের অর্থ হলো পাহাড়চূড়া হিমালয় পর্বতের সূর্য শিখর গুলোর মাঝখানে মনোরম পরিবেশে গ্যাংটকের অবস্থান, শহরটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থিত অথচ বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পাহাড় চূড়া সাকাহাফং এর উচ্চতা মাত্র সাড়ে তিন হাজার ফুট,
তার মানে সিকিমের
রাজধানী শহর বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিন্দুতে 2,000 ফুট উঁচুতে অবস্থিত
সিকিমের রাজধানী শহর খুবই
পরিষ্কার এবং ছবির মতো
সুন্দর, অনেক সময় আপনার
মনে হবে না এটি
ভারতের কোন শহর কিছু
ক্ষেত্রে গ্যাংটকের ইউরোপের শহর মনে হতে
পারে’
গ্যাংটকের যোগাযোগ
ব্যবস্থা এবং আরামদায়ক জলবায়ু
কারণে শহরটি সিকিমের প্রধান
পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে উঠেছে
গ্যাংটকের আশেপাশে
বেশ কিছু দর্শনীয় স্থান রয়েছে,
সবগুলো জায়গা
ঘুরে দেখতে চাইলে কমপক্ষে দুই থেকে তিন দিন সময় লাগবে গ্যাংটকের নিকটবর্তী সবচেয়ে
আকর্ষণীয় জায়গা হল সাঙ্গুলেক, এই রত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে 12 হাজার ফুট
উচ্চতায় অবস্থিত তুষারাবৃত পর্বতের মধ্যে থাকা এই লেকটি শীতকালের পুরোটাই বরফ হয়ে
যায়|
ঝর্ণা মিলিত হয়ে
সিকিমের বেশ কয়েকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে!
সিকিম রাজ্যটি
তিন দিক থেকে অত্যন্ত খারাপ বাহার দ্বারা পরিবেষ্টিত এখানে নিম্নভূমি খুব কমই আছে সিকিমের
অসংখ্য পাহাড়ের মাঝে ছড়িয়ে রয়েছে অগণিত ঝরনা, শীতকালে বহু ঝরনা জমে বরফ হয়ে থাকে
বরফ গলা এসব জলপ্রপাত নিঃসন্দেহে আপনাকে মুগ্ধ করবে ছোট বড় বহু ঝর্ণা মিলিত হয়ে সিকিমের
বেশ কয়েকটি নদীর সৃষ্টি হয়েছে|
এসব নদী বহু পথ
পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পতিত হয় সিকিমের নদীগুলোর
মধ্যে রয়েছে রাঙ্গিত, নোলক, তালুঙ্গ এবং লাজুঙ্গ এই সবগুলো নদী আবার একসাথে মিলে সৃষ্টি
হয়েছে সিকিমের প্রধান নদী তিস্তা|
সিকিমের উৎপন্ন
এই তিস্তা নদী পশ্চিমবঙ্গের দার্জিলিং পেরিয়ে নীলফামারী জেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ
করেছে এরপর তিস্তা ব্রহ্মপুত্র নদীর সাথে মিলিত হয়েছে, এসব পাহাড়ি ঝর্ণা নদী আমাদের
বাংলাদেশের জনজীবনেও গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রাখে বর্ষাকালের পাওসই সিকিমে অধিক বৃষ্টির
প্রভাবে বাংলাদেশের ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়|
পৃথিবীর সবচেয়ে
কম লোক বসবাস করে সিকিমে!
ভারতীয় রাজ্য
গুলোর মধ্যে সিকিমে সবচেয়ে কম লোক বসবাস করে সিকিমে জনসংখ্যার মাত্র সাড়ে ছয় লক্ষ, এখানকার জনগণ সাধারণত বিচ্ছিন্ন গ্রামীণ জীবন
যাপনে অভ্যস্ত সিকিমে সবচেয়ে বড় জনবসতি হলো গ্যাংটক, এ ছাড়া সিংতাম রাংপো, জরদান,
গেইজিং, এবং নামছে এলাকায় কিছু বড় জনবসতি লক্ষ্য করা যায়,
সিকিমের সংস্কৃতি
সরাসরি তিব্বতে বৌদ্ধ সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত তবে অতীতে নেপালি আগ্রাসনের কারণে নেপালি
হিন্দু সংস্কৃতি সবচেয়ে প্রভাবশালী, বর্তমানে সিকিমের প্রায় 60 শতাংশ লোক হিন্দু
30 শতাংশ বৌদ্ধ এবং বাকিরা খিরিস্টান সহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারী,
কৃষিপণ্যের
মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বড় এলাচ!
সিকিমের জীববৈচিত্র্য অত্যন্ত সমৃদ্ধ এই রাজ্যের পাঁচ ভাগের দুই ভাগ অংশজুড়ে রয়েছে বনভূমি এছাড়া সিটি ভারতের সবচেয়ে পরিবেশ-সচেতন রাজ্য ফলে এখানে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্য নিষিদ্ধ’
যেহেতু এখানকার অধিকাংশ লোক গ্রামীণ জীবনে অভ্যস্ত তাই সিকিমের অর্থনীতিও প্রধানত কৃষিনির্ভর 2003 সাল থেকে 2016 সালের মধ্যে সিকিম তার কৃষি ব্যবস্থায় সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতি প্রয়োগ করতে সক্ষম হয়েছে, সিকিমের কৃষিপণ্যের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বড় এলাচ,
একটি ভারতের
বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক রাজ্য
এছাড়া গুয়েতেমালার পরে
সিকিম বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম এলাচ উৎপাদক অতীতে সিকিম ছিল একটি স্বাধীন
দেশ পরবর্তীতে নানা ঘটনা প্রবাহের মধ্য
দিয়ে দেশটি ভারতের একটি
রাজ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়|
একটা সময়ে ঈশ্বরের
বাড়ি বলে পরিচিত ছিল সিকিম দেশটি!
দেশ কি কখনো মনে
হয়তো সেভ দাগ টানা মানচিত্র সীমারেখা বা জোর করে চাপিয়ে দেয়া কাঁটাতারের নামি দেশ
কিন্তু পরক্ষণেই ধন্দে পড়ে যেতে হয়’এই সীমারেখার মধ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জনের জন্য
যুগে যুগে কত না রক্তপাত কতনা বলি দানি দিতে হয়,
ইতিহাসে পাতা
অনেক জাতি যেমন স্বর্ণাক্ষরে নিজেদের স্বাধীনতার অর্জনের গল্প লিখেছেন তেমনি পাশাপাশি
কাল হরফে লেখা স্বাধীনতা হারানোর অধ্যায় সংখ্যা নেহায়েত কম নয়, সাম্প্রতিক ইতিহাসে
এমন দেশের কথা বলতে গেলেই চলে আসে সিকিমের নাম|
একটা সময়ে ঈশ্বরের
বাড়ি বলে পরিচিত ছিল যে দেশটি বর্তমানে হারিয়ে যাওয়া দেশের তালিকায় সবার প্রথমে
উঠে আসে সিকিম দেশটি আজ সে ঈশ্বরের বাড়ি কোথায়