কাতার পৃথিবী
শীর্ষ ধনী দেশ অযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে
কাতার অন্যতম
1971 সালে কাতার ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে |
মধ্যপ্রাচ্যের ছোট্ট একটি দেশ কাতার মাথাপিছু আয় এর ভিত্তিতে কাতার পৃথিবীর সবচেয়ে এমন একটি ধনী দেশ এই দেশের প্রায় পুরোটা অঞ্চলে বড় মরুভূমি, গ্রীষ্মকালে কাতার উপদ্বীপের তাপমাত্রা থাকে প্রায় 50 ডিগ্রি সেলসিয়াস সেই কারণে পৃথিবী শীর্ষ অযোগ্য স্থানগুলোর মধ্যে কাতার অন্যতম’ অতীতের এই ব্রিটিশ উপনিবেশ ছিল দুর্গম ও চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার অতিদরিদ্রদের, 1971 সালে কাতার ব্রিটিশদের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে সেইসময় ব্রিটিশদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবচেয়ে দরিদ্র দেশ ছিল কাকার’
কাতারের
আয়তন মাত্র সাড়ে 11 হাজার
বর্গকিলোমিটার!
বাংলাদেশ কাতারের চেয়ে প্রায় 13 গুন বড় |
কাতারের জনসংখ্যা 30 লাখ এরকম এর মধ্যে মাত্র তিন লক্ষ লোক কাতারের নাগরিক এবং বাকি সবাই প্রবাসী কাতারের নাগরিকদের মাথাপিছু আয়ের প্রায় 1 কোটি 15 লক্ষ টাকা’ যা বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় এর 71 গুণ বেশি গতিতে কাতারের অর্থনীতি ছিল মাছ ধরা এবং মুক্তা শিকারের ওপর নির্ভরশীল’
1920 সালে জাপানি চাষ করার মুক্তা কারণে কাতারি মুক্তা শিল্প ধ্বংস হয়ে যায় তারপরও দরিদ্র এই দেশটির ভাগ্যের চাকা বদলে যায়’ অভাবনীয় উপায় মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশের মতো কাদার তার মাটির নিচের ক্ষণিক সম্পদের কারণ এর শক্তিশালী অর্থনীতি দেশে পরিণত হয়েছে’
ক্ষণিজ তেল নয়
সেইসাথে পেয়েছে প্রাকৃতিক গ্যাসের ক্ষণি!
জাপানি চাষ করার মুক্তা |
তখনও পর্যন্ত কাতারি জনগণের জীবনে তেমন কোনো পরিবর্তন আসেনি 1970 সালের সেল কম্পানি কাতারের সবচেয়ে বড় প্রাকৃতিক গ্যাসের খনি আবিষ্কার করেন’ এই খনির নাম the not field এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গ্যাসের খনি যে সময় কাতারের এই খনি আবিষ্কার হয়েছে’
সে সময়ে প্রাকৃতিক গ্যাস মোটেও লাভজনক ব্যবসা ছিল না কারণ সে সময় গ্লাস শুধুমাত্র পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করার ব্যবস্থা ছিল’ আর কাতার এমন এক দুর্গম জায়গায় অবস্থিত যে এখান থেকে পাইপের মাধ্যমে চাহিদাসম্পন্ন কোন জায়গায় গ্যাস পৌঁছানো ছিল অনেকটাই অসম্ভব’ সে কারণেই এত বিপুল সম্পদ 90 দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত কাতারের তেমন কোনো উন্নতি হয়নি|
পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কাতারের রাজ ক্ষমতা চিনিয়ে নেন!
কাতারের আলধনী রাজপরিবার দেড়শ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাঁদার শাসন করে আসছেন কাতার শীর্ষ ধনী হওয়ার পেছনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে’ সাবেক হামাদ বিন খলিফা আল থানি তিনি 1995 সালে তার পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে কাতারের রাজ ক্ষমতা চিনিয়ে নেন’
হামাদ বিন খলিফার মূল লক্ষ্য ছিল কাতারের প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ কে কাজে লাগান তিনি আমির হিসেবে ক্ষমতা গ্রহণের পর প্রাকৃতিক গ্যাসের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কারের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেন’ এই পদ্ধতির নাম লিকুইফাকেশন এই প্রক্রিয়ায় তরলীকৃত গ্যাস বড় বড় জাহাজের তেলে মত পরিবহন করা যায়’
এবং গ্যাস কে তরলে পরিণত করার পর -161 ডিগ্রি সেলসিয়াস এত বড় তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয় কাতারের মত উষ্ণ এলাকায় এমন তাপমাত্রা ধরে রাখাটা খুব একটা সহজ কাজ নয়’ পরবর্তীতে কাতার কর্তৃপক্ষ এমন প্রযুক্তিতে আরো বিপুল এই অর্থায়নের ফলে তাদের উৎপাদন আর বহুগুণে বেড়ে যায়|
সেই বিনিয়োগের কারনে কাতার বিশ্বের সবচেয়ে বড় লিকুইফাইড ন্যাশনাল গ্যাস বা এলএনজি রপ্তানিকারক দেশে পরিণত হয়’ কাতারের গ্যাস ক্ষেত্রগুলোতে বিশাল বিশাল ইন্দুষ্ট্রিয়াল কম্প্লেক্স গড়ে তোলার কারণে এখানে গ্যাস উত্তোলন এবং তরলীকরণের পৃথিবীর যেকোনো দেশের তুলনায় কম খরচ হয়’
কাতারিরা একটি
ট্যাংক ভরতে খরচ হয়
আমেরিকায় চারগুণ বেশি!
কাতারিরা একটি ট্যাংক ভরতে যে পরিমান ও খরচ হয় আমেরিকায় তার উৎপাদন খরচ প্রায় চারগুণ বেশি সস্তায় বিপুল পরিমাণ তরল গ্যাস এলএনজির রপ্তানির কারণেই কাতার বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশের খেতাব অর্জন করতে পেরেছে|
খনিজ তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাসের মজুদ ফুরিয়ে গেলে কাতারের অর্থনীতি যাতে ভেঙে না পড়ে সেজন্য তৎকালীন’আমির হামজার দিন খলিফা আরো একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেন তিনি 2005 সালে কাতার ইনভেসমেন্ট অথরিটি নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন’’
কাতারের অর্থনীতিকে বহুমুখী করার লক্ষ্যে এই প্রতিষ্ঠান সারা পৃথিবীতে বিনিয়োগ করে থাকে কাতারে ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি চল্লিশটির ও বেশি দেশে 400 বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে’
সিঙ্গাপুর থেকে সিলিকন ভ্যালি কোন জায়গা কাতার ইনভেসমেন্ট অথরিটি তালিকা থেকে বাদ পড়েনি,
ইংল্যান্ডের
রানীর চেয়েও বেশি সম্পদ
আছে কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি!
লন্ডন
শহরে ইংল্যান্ডের রানীর চেয়েও বেশি
সম্পদ আছে কাতার ইনভেস্টমেন্ট
অথরিটি
এইসব সম্পদের মধ্যে
রয়েছে অফিস বিল্ডিং হোটেল
অ্যাপার্টমেন্ট সহ নানা ধরনের
রিয়েল এস্টেট প্রজেক্ট’ লন্ডন
শহরের শীর্ষ 15 টি আকাশচুম্বী অট্টালিকা
34 শতাংশ কাতারি মালিকানাধীন’
অথচ যুক্তরাজ্যের কোম্পানিগুলোর সম্মিলিত মালিকানায় রয়েছে মাত্র 21শতাংশ এখানেই শেষ নয় ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ এবং লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দরে 20 শতাংশের মালিক কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি’ তারা রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গ এয়ারপোর্টের 25 শতাংশের মালিক’
2016 সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চতুর্থ সর্বোচ্চ অফিস ইনভেস্টর হয়েছে কাতার শুধুমাত্র নিউ ইয়র্কের নির্বাচন প্রাণকেন্দ্র ম্যানহাটান এই পাঁচ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে কাতার কর্তৃপক্ষ’ কাতার ইনভেসমেন্ট অথরিটি বিশ্বের বিখ্যাত বেশ কয়েকটি বহুজাতিক কোম্পানির শেয়ার হোল্ডার’
ভক্সওয়াগন BARCLAYS Bank Uber IPERDROLA TIFFANY&CO এমনকি রাশিয়ার সরকারি তেল কোম্পানির ROSNEFT আছে এই তালিকায়’ কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি ইতালিয়ান লাগজারি ব্রণ্ড কিনে নিয়েছে এরপর 2011 সালে তার কিনে ফ্রান্সের বিখ্যাত ফুটবল ক্লাব প্যারিস সেন্ট জারর্মেইন|
ধনী হবার পাশাপাশি বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করা কাতার অন্যতম উদ্দেশ্য বর্তমান পৃথিবীতে মানুষের মনোজগতের উপনিবেশ গড়ে তুলতে গণমাধ্যম এর কোন বিকল্প নেই’
এই গ্রুপের অধীনে বিনোদন ভিত্তিক 60 টি চ্যানাল আছে!
বিশ্ব জনমত গঠনে জোরালো ভূমিকা রাখতে কাতার সরকার প্রতিষ্ঠা করেছে ALJAZEERA MEDIA NETWORK’সারা পৃথিবী জুড়ে আল-জাজিরার প্রায় 80 টিরও বেশি News Bureau রয়েছে বিবিসির পরে ALJAZEERA WORLD এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহৎ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক’ কাতারি মালিকানাধীন আরো একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান হল বেইন মিডিয়া গ্রুপ’
এই গ্রুপের অধীনে খেলা এবং
বিনোদন ভিত্তিক 60 টি চ্যানাল আছে
43 টি দেশে 7টি ভিন্ন ভিন্ন ভাষায়
সম্প্রচারিত হয়’ এছাড়া আমেরিকার
বিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মিরা MIRAMAX ও কিনানেয় কাতারি মালিকানাধীন bein
MEDIA Group’
2003 সালে সৌদি আরব থেকে আমেরিকান সৈন্য প্রত্যাহার করার সাথে সাথে কাতার নিজ উদ্যোগে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচ করে আমেরিকান সেনাদের জন্য ঘাঁটি নির্মাণ করে’
কাতার অবস্থিত দুটি ঘাঁটিতে প্রায় 11 হাজার আমেরিকান সেনা নিয়োজিত রয়েছে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা করতে তুরস্ক এবং ইরানের সাথে কাতার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলেছেন,
ক্ষুদ্র এইদেশটি বৈশ্বিক প্রভাব কমাতে সৌদি আরবের নেতৃত্বে কাতারের ওপর অবরোধ আরোপ করা হলেও তাতে কাতারের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি’ বরং কাতারের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে অপ্রতিরোধ্য গতিতে একদিকে কাতারের রাজ পরিবার তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে|