LSD সাইকোডালিক মাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

LSD সাইকোডালিক মাদক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা

LSD মাদক

 ক্লিক হেয়ার 

সাইকোডালিক মাদকের আলোচনা আসলেই LSD নাম আসবে সবার আগে সাইকোডালিক মাদক হল এমন এক ধরনের ডাক যা ব্যবহারের ফলে মানুষের বাস্তব আর অবাস্তব এর পার্থক্য  ভুলে  যায়’ LSD মূলত এক ধরনের এসিড এর পুরো নাম হল Lysergic Acid Diethylamide সম্প্রতি বাংলাদেশে LSD প্রভাবে এক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আত্মহত্যার ঘটনায় ভয়াবহ এই মাদক ব্যাপক আলোরন সৃষ্টি করেছে|

আলবার্ট হফম্যান সর্বপ্রথম LSD তৈরি করেছিলেন!

আলবার্ট হফম্যান সর্বপ্রথম LSD তৈরি করেন

রায় জাতীয় শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরনের ছত্রাকের শরীরে Lysergic Acid এসিড উৎপন্ন হয় সেই অ্যাসিড রাসায়নিক সংশ্লেষ এর মাধ্যমে LSD তৈরি করা হয়’ 1938 সালে 16 নভেম্বার সুইজারল্যান্ডের রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান সর্বপ্রথম LSD তৈরি করেছিলেন,

কিন্তু তার ও পাঁচ বছর পর 1943 সালে তিনি এলএসডি সাইকেডেলিক বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে পারেন আলবার্ট হফম্যান নিম্ন রক্তচাপ ও শ্বাসপ্রশ্বাস উন্নত করার ঔষধ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে’ নিজের অজান্তেই শক্তিশালী এই মাদক তৈরি করে ফেলেছিলেন|

হফম্যান বলেন LSD আমি আবিষ্কার  করেনি এলএসডি আমাকে খুঁজে নিয়েছে 1950 ষাটের দশকে মানসিক রোগ বিষন্নতা দুশ্চিন্তা ঔবশাধের চিকিৎসায় পরীক্ষামূলকভাবে এলএসডি ব্যবহার শুরু হয়’ 1971 সালে জাতিসংঘ চিকিৎসার জন্য এলএসডি ব্যবহার নিষিদ্ধ করে,

এতটাই নেশা এতটাই ভয়াবহ LSD!

ভয়ংকরএলইডি প্রভাব পড়ছে পরিমাণের উপর 

এলএসডি এতটাই ভয়াবহ যে এই মাদকের পরিমাণ মাইক্রোগ্রামে হিসেব করা হয় 1 মাইক্রোগ্রামে হল এক গ্রামের 10 লক্ষ 1 ভাগ’ সাধারণত এলএসডির একটি ডোজ 40 থেকে 500 মাইক্রোগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে যা একটি বালুকণার বরের দশভাগের একভাগ মাত্র,

অর্থাৎ এত সামান্য পরিমাণ এলএসডি গ্রহণ করলেও যে কারো নেশা হতে পারে  মাদক হিসেবে এলএসডি ব্লাটার কাগজে বিক্রি করা হয়’

এই কাগজের জিব্বার উপরে বা নিচে রেখে এলএসডি সেবন করা হয় এলএসডি গ্রহণ  এরপর তা মানুষের মস্তিষ্কের সেরেটোনিন নামক রাসায়নিক এর কার্যক্রম প্রভাবিত করে’ যার ফলে মানুষের শ্রবণ এবং দর্শনেন্দ্রিয় অতি সক্রিয় হয়ে যায়,

সে কারণেই এ এলএসডি সেবনের পর মানুষ অদ্ভুত রকমের আলো বা রং দেখতে পায় কেউ আবার অস্বাভাবিক শব্দ শোনে বাস্তবের যার কোন অস্তিত্বই নেই’ এই অবস্থাকে বলে LSD Trip এলএসডি ট্রিপে থাকা কালিন সময়ে মানুষ অস্বাভাবিক আচরণ করে অনেকের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতা লক্ষ করা যায়|

এ ধরনের খারাপ অনুভূতিকে বলা হয় Bad Trip বেড ট্রিপের কারণেই মানুষ অমূলক ভয় পায় মুহূর্তের মধ্যেই মারাত্মক দুশ্চিন্তায় ভোগে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েন নিজের বা অন্যের ক্ষতি করার প্রবণতা তৈরি হয়’

এলএসডি সেবনের আধাঘন্টার মধ্যে Trip শুরু হয়!

এছাড়া এলএসডি কারণে মানুষের হৃদস্পন্দন রক্তচাপ শ্বাস-প্রশ্বাসের মাত্রা এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এলএসডি সেবনের আধাঘন্টার মধ্যে Trip শুরু হয়ে যায়’  

ব্যক্তিবেদে তা 6 থেকে 12 ঘন্টাটা পর্যন্ত থাকে তবে সেবনের মাত্রার উপর ভিত্তি করে তার ওপরে 20 ঘণ্টা পর্যন্ত এলএসডি কার্যকর হতে পারে অনেকের ক্ষেত্রেই চরম অনিদ্রা দেখা দেয়’ কেউ কেউ আবার অতিরিক্ত ঘুমায় বিষণ্নতায় ভোগার ব্যক্তিরা এলএসডি সেবনের পর আরও বেশি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে যেতে পারে|

এছাড়া অনেকে মনে করে এলএসডি সেবনের এর প্রভাবে তাদের শরীরে অতি মানবীয় শক্তি চলে এসেছে এমন কল্পনা থেকেও বহু দুর্ঘটনা ঘটতে পারে’ বিশেষজ্ঞরা মনে করেন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মানুষ একক মাদক হিসেবে এলএসডি গ্রহণ করে না,

অর্থাৎ যারা অন্যান্য মাদকে আসক্ত তাদের ক্ষেত্রে এলএসডি প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি’ হেরোইন বা ইয়াবা তুলনায় এলএসডি তুলনামূলক কম আসক্তিকর তাই বলে এটি মোটেও নিরাপদ নয়|

মাদক গ্রহণ ছাড়াই মস্তিস্কে হুট করে এলএসডি প্রভাব তৈরি করে!

প্রচলিত যেকোনো মাদকের তুলনায় এলএসডি হাজারগুণ শক্তিশালী এলএসডি সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো ফ্ল্যাশব্যাক এলএসডি সেবনের কয়েক দিন কয়েক মাস বা বছর খানিক পরে ও মাদক গ্রহণ ছাড়াই মস্তিস্কে হুট করে এলএসডি প্রভাব তৈরি হতে পারে|

একেই এলএসডি ফ্ল্যাশব্যাক বলে ফ্ল্যাশব্যাক এর কারণে দীর্ঘ মেয়াদী মানসিক সমস্যা তৈরি হতে পারে অনেকে বাস্তব আর অবাস্তব এর পার্থক্য ভুলে যায়’ অর্থাৎ জীবনে মাত্র একবার এলএসডি গ্রহণ করলেও মানুষের মস্তিস্কে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে|

এলএসডি একধরনের সাইকেডেলিক গ্রহণের ফলে মানুষ হ্যালুসিনেট করে এমন দৃশ্য দেখাচ্ছে যা বাস্তবে নেই অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখে থাকে, এটা তাৎক্ষণিকভাবে এতটাই ভিজুয়াল হেলুসিলেশন তৈরি করতে সক্ষম যে কেউ কেউ নিজেকে  পাখির মনে করেন ছাদ থেকে লাফ দিয়ে উঠতে শুরু করে’

অনেকেই নিজেকে অতি মানবীয় শক্তিধর মনে করে বিভিন্ন ধরনের দুর্ঘটনার জন্ম দেয় এটা ভিজুয়াল হ্যালুসিনেশন নামে পরিচিত, সাধারণত নেতিবাচক অভিজ্ঞতাগুলোকে খারাপ দিস্ট্রাইক্ট নামে উল্লেখ করা হয়”

এটি স্বচ্ছ গন্ধহীন এবং কিছুটা তেতো স্বাদ যুক্ত একটি পদার্থ গবেষকদের কাছে এটি এলএসডি 25 নামে পরিচিত কারণ হফম্যান Lysergic Acid Diethylamide নিয়ে গবেষণা এবং অধ্যায়ন করছিলেন তখন এটি ছিল 25 তম যৌগ’

হফম্যান নিজেই 25 গ্রাম এলএসডি গ্রহণ করেন!

মূলত মানসিক রোগের চিকিৎসার উদ্দেশ্যে এলএসডি নিয়ে গবেষণা করা হচ্ছিল তবে হফম্যান নিজেই 25 গ্রাম এলএসডি গ্রহণ করেন, এরপর তার সাথে এমন কিছু ঘটলো জাতি নিয়ে এলএসডি গ্রহণের আগে চিন্তাও করতে পারেননি তিনি কিছুক্ষণের ভেতরে বুঝতে পারলেন তিনি নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছেন’

তিনি তার সহকারীকে বললেন তাকে দ্রুত বাসায় দিয়ে আসতে তার সহকারী তাকে বাই সাইকেলে করে বাসায় নিয়ে যায় পরবর্তীতে তিনি ঐ দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে বলেছেন, তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন ঘরের  সমস্ত আসবাবপত্র যন্ত্রপাতি দূরে সরে যাচ্ছিল,

এবং যেকোনো সময় সেগুলো তার দিকে তীব্র গতিতে ছুটে আসবে একজন মানুষ ভয়ংকর রঙিন মুখোশ পরে তার কাছে দুধ নিয়ে এসেছিল’ কিছুক্ষণ পর তিনি ধীরে ধীরে দেখতে শুরু করলেন বিচিত্র ঝলসানো ছবির মতো রঙিন বৃত্ত রঙের ছাপটার একবার সংকোচিত হচ্ছে আবার তৎক্ষণাৎ ছড়িয়ে পড়ছে”

ওইদিনই বাইসাইকেলডে নামে বিখ্যাত হয়ে আছে কারণ তখন দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধ চলছিল এবং যানবাহন চলাচলের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল’

নানা ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহার করে!

উনিশো পঞ্চাশ এর দশকে স্নায়ু যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আমেরিকার সর্বোচ্চ গোয়েন্দা সংস্থা সিআই এ এম অতি গোপনীয় একটি মিশন শুরু করে’

যা ষাট দশক পর্যন্ত চলছিল এই কমিশনের অধীনে তারা এলএসডি ও অন্যান্য পদার্থ কিছু স্বেচ্ছাসেবক এবং কিছু অজ্ঞাত ব্যক্তির উপরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছিল” সিআইএ ভেবেছিল শীতল যুদ্ধের  এলএসডিকে একটি মনস্তাত্ত্বিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে”

এই মিশনটা সিআইএ'র মাইন্ড কন্ট্রোল প্রোগ্রামের অংশ ছিল নানা ধরনের মানসিক রোগের চিকিৎসায় এলএসডি ব্যবহার এর জন্য প্রচারণা চালান গবেষকরা, সেসময় এই বিষয়ে বহু বৈজ্ঞানিক গবেষণা পরিচালিত হয় আয়োজিত হয় একাধিক বৈজ্ঞানিক সম্মেলনেও|  

1971সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়!

ফলে তখন ডেলিশিয়াস নামে একটি ওষুধ হিসেবে বিক্রয় হয়েছিল বর্তমানে এলএসডি কোন অনুমোদিত ব্যবহার নেই 1971সালে জাতিসংঘ চিকিৎসা কাজে এলএসডি ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দিলে এই বিষয়ে গবেষণা ভাটা পড়ে|

বর্তমানে এলএসডি নেশাজাতীয় দ্রব্য হিসেবে ব্যাপক আকারে ব্যবহার করা হয় তাই অধিকাংশ দেশেই এটি উৎপাদন ও বিক্রয় নিষিদ্ধ, যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডাগ এভিউজের এর তথ্য অনুযায়ী এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লিষ্ট মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ|

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরী অব মেডিসিনের মতে এটি পাউডার ট্যাবলেট ক্যাপসুল এর আকারে পাওয়া যায় এলএসডি বোল্ডার চিনির কিউব বা জেলটার কাগজ বিক্রি করা হয় এটি এতই শক্তিশালী যে মাত্র 20 থেকে 30 মাইক্রো গ্রামে এলএসডি প্রভাব উৎপাদনের জন্য যথেষ্ট’

ইউরোপের বিজ্ঞানী এবং গবেষকদের বাণিজ্যিক ওয়েবসাইট রিচার্জ গেটে 2017 সালে প্রকাশিত এক গবেষণার তথ্য অনুযায়ী 1953থেকে 2007 সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য ও কানাডা মোট 64 জনের মৃত্যু হয়|

{-আসসালামু আলাইকুম আপনাদের অনেক ধন্যবাদ আপনারা অনুগ্রহ করে আমার ওয়েবসাইটে এসে ভিজিট করার জন্য l আমি অনুগ্রহ করে আপনাদের কাছ থেকে লাইক কমেন্ট শেয়ার আশা করি -}