#প্রধানমন্ত্রীকি এটা সঠিক বিচার করছে#
মেয়র জাহাঙ্গীরকে দল থেকে বহিষ্কার
নিজস্ব প্রতিবেদক শুক্রবার। ৪ অগ্রহায়ণ ১৪২৮। ২০ নভেম্বর ২০২১। পড়া যাবে ৬ মিনিটেপ্রিন্ট
মেয়র জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের পর গাজীপুরে আনন্দ মিছিল
এবং মিষ্টি বিতরণ
মেয়র জাহাঙ্গীরকে দলথেকে বহিষ্কার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বিরূপ মন্তব্য ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের বিষয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের অভিযোগে বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তি করায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে দলীয় পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে । আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র। তাঁর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দিয়েছেন
শুক্রবার বিকেলে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয় । সভায় সভাপতিত্ব করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির ৫০ নেতা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একাধিক নেতা কালের কণ্ঠকে জানান, জাহাঙ্গীর আলমের প্রসঙ্গটি নিয়ে কথা শুরু করেন আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক মৃণাল কান্তি দাস। তিনি জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কারের পক্ষে বক্তব্য দেন। পরে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দের মধ্যে অনেকেই মাহবুবউল আলম হানিফ, দীপু মনি, বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন শফিক সহ , তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সেলিম মাহমুদ, এবং কার্যনির্বাহী সদস্য সানজিদা খানম, আনোয়ার হোসেন,
এবং সেই সঙ্গে সাহাবুদ্দিন ফরাজীও তাঁদের বক্তব্যে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন। বৈঠক সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা মেয়র জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে তাঁকে পাঠানো কারণ দর্শানোর চিঠি এবং জাহাঙ্গীরের জবাব পড়ে শোনাতে বলেন। চিঠি দুটি পড়ে শোনান আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আব্দুস সোবহান গোলাপ। এ সময় সভায় উপস্থিত বেশির ভাগ কেন্দ্রীয় নেতা সমস্বরে জাহাঙ্গীরকে বহিষ্কারের দাবি তোলেন .এখন আইনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেঅন্য বিষয়গুলোর ফায়সালা হবে।’
গত অক্টোবরে জাহাঙ্গীর আলমের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। গোপনে ধারণ করা ওই ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি এক ব্যক্তির সঙ্গে আলাপচারিতায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করছেন। এর পরই তাঁর শাস্তির দাবিতে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
জাহাঙ্গীর আলম তখন কালের কণ্ঠকে বলেছিলেন, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ অতি উৎসাহী হয়ে তাঁর বক্তব্য সম্পাদনা করে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।
গত ৩ অক্টোবর দলীয় স্বার্থপরিপন্থী কর্মকাণ্ড ও সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে জাহাঙ্গীর আলমকে কারণ দর্শানের চিঠি দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে জাহাঙ্গীর আলমকে বলা হয়েছে ১৫ দিনের মধ্যে কারণ দর্শাতে বলা হয়। চিঠির জবাব দিয়ে নিজের ভুল স্বীকার করে নিঃশর্ত ভাবে ক্ষমা চাইলে সবার কাছে জাহাঙ্গীর।
আওয়ামী লীগের সূত্রগুলো জানায়, জাহাঙ্গীর আলমের জবাব আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তিনি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যে মন্তব্য করেছেন, তা ক্ষমার অযোগ্য মনে করেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
সভাপতিমণ্ডলীতে যোগ হলেন তিন নেতা
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় দলটির সভাপতিমণ্ডলীর তিনটি শূন্য পদ পূরণ করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের দুই সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ও কামরুল ইসলামকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে। এবারের কেন্দ্রীয় কমিটিতে না থাকলেও সভা পতিমণ্ডলীর সদস্য করা হয়েছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটনকে। চার জাতীয় নেতার অন্যতম এইচ এম কামারুজ্জামানের ছেলে লিটন বর্তমানে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়র।
এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব কভিড আক্রান্ত হয়ে গত এক বছরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর তিনজন সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, এবং সাহারা খাতুন ও আব্দুল মতিন খসরুর মৃত্যুতে পদ তিনটি শূন্য হয়ে যায়।
অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সভার সূচনা বক্তব্যে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সচেতন হতে এবং অপপ্রচারের জবাব দিতে দলীয় নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন
শেখ হাসিনা আরো বলেন, এত উন্নয়নের পরও কিছু মানুষ দেশে-বিদেশে অপপ্রচার করছে। এবং দেশের সম্মান নষ্ট করতেছে এদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে, অপপ্রচারের জবাব দিতে হবে।
আরো ক্ষিপ্ত হয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কিছু মানুষ মিটিং করছে কী করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরানো যায়। এবং ক্ষমতা হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় জনগণের শক্তিই আওয়ামী লীগের শক্তি। আমরা জনগণের সেবায় কাজ করে যাচ্ছি এবং আরো করেই যাবো।’
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘মানুষ তো বিএনপিকে পছন্দ করেনা বিএনপিকে কোন আশায় মানুষ ভোট দেবে? পলাতক আসামি যে দল চালায়, মানুষ কোন ভরসায় কী দেখে কোন আশায় ভোট দেবে? এরা দেশের গরিবের টাকা লুট করে বিদেশে পাচার করেছে। বিদেশে বসে আরাম-আয়েশে আছে। তাদের এই আয়ের উৎস কী?’
এবং প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, তাঁর স্ত্রী খালেদা জিয়া এবং আরেক সামরিক শাসক এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এবং তাদের খুনিদের পুরস্কৃত করেছিলেন । তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, এরশাদ ও জিয়াউর রহমান কিভাবে এই খুনিদের মদদ দিয়েছেন, আমার মনে হয় এই কথাটা জাতির জানা উচিত।’
ইউপিতে বিদ্রোহীদের মদদদাতারাও পদ হারাবেন
সভায় চলমান স্থানীয় সরকার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী এবং তাঁদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। ইউপিতে বিদ্রোহী ও তাঁদের মদদদাতাদের বিরুদ্ধে কঠোর মনোভাব প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা। তিনি বিভাগীয় দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিদ্রোহীদের মদদদাতাদের তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেন। মদদদাতারা মন্ত্রী, এমপি হলেও দল থেকে বাদ দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন শেখ হাসিনা। নতুন দলকে যেন বাধা দেওয়া না হয়
শুরু হয় তীব্র সমালোচনা গাজীপুর নগরীজুড়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে মানুষ ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান স্থানীয় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা শেখ হাসিনা সভার শুরুতে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ দের বলে নতুন দলকে কর্মসূচিতে বাধা না দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমি কালকেও আইজিপিকে বলেছি, যারা নতুন পার্টি করতে চাচ্ছে তাদের পার্টি করতে দেওয়া উচিত এবং তারা দল করুক,এবং তারা যাতে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা উচিত তারা কাজ করুক। কারণ বাংলাদেশে দরকার আছে। যে যত দল করতে চায় করতে পারে। সরকার থেকে কোন প্রকার বাধা আসবে না’
তাতে বাধা প্রদান করতে পারবেনা শেখ হাসিনা বলেন , এখানে বহুদলীয় গণতন্ত্র বিদ্যমান। তাতে বাধা প্রদান করতে পারবেনা কাজেই এখানে যেন কোনো বাধা দেওয়া না হয়।
মেয়র জাহাঙ্গীরকে দল কবে এবং কিভাবে আসলো
আওয়ামী লীগের স্বার্থপরিপন্থী কর্মকান্ড ও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে গত 23 সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয়া হয় জাহাঙ্গীর আলম 2009 সালের 22 জানুয়ারি গাজীপুর সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং 2013 সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশন গঠন হলে নাগরিক কমিটির ব্যানারে আনারস প্রতীকে মেয়র প্রার্থী হন তিনি নির্বাচনের আগে কেন্দ্রীয় নির্দেশনায় দলীয় প্রার্থীকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে যান তিনি 2016 সালে আওয়ামী লীগের মহানগর সাধারণ সম্পাদক 2018 সালের নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে নির্বাচিত হন