এ.কে ফজলুল হক বিশ্বের প্রথম মুসলিম মেয়র, শেরে বাংলার আত্মজীবনী
একে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী |
1935 সালে এ.কে ফজলুল হক কলকাতার মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন এবং তিনি কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশনের প্রথম মুসলিম মেয়র, 1935 সালের মার্চে বঙ্গীয় আইন পরিষদের নির্বাচনে কৃষক প্রজা পার্টির পক্ষ থেকে পটুয়াখালী নির্বাচনী এলাকা থেকে একে ফজলুল হক ও মুসলিম লীগের মনোনীত পটুয়াখালীর জমিদার ও ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খাজা নাজিমুদ্দিন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন|
স্লোগান ছিল নাঙ্গল যার জমি তার` ঘাম যার দাম তার!
ইতিহাসের তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত |
এই নির্বাচনে
কৃষক প্রজা পার্টির 39 টি আসন ও মুসলিম লীগ 38 টি আসন লাভ করে নির্বাচনে মুসলিম লীগের
সাথে সমঝোতা গিয়ে এ.কে ফজলুল হক 11 সদস্য বিশিষ্ট যুক্ত মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন’
মন্ত্রীদের মধ্যে
3 জান কৃষক প্রজা পার্টির 3 জান মুসলিম লীগ 3 জান বর্ণ হিন্দু এবং 2 জান তফসিলের সম্প্রদায়ের
সদস্য ছিলেন’ 1935 সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী
পদে অধিষ্ঠিত হন|
তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী!
প্রধানমন্ত্রী
হিসেবে একে ফজলুল হক বহু কর্মসূচি হাতে নিয়ে ছিলেন 1935 থেকে 1947 সাল পর্যন্ত দীর্ঘকালের
প্রধানমন্ত্রী তিনি বহু জনকল্যাণমূলক কাজ করেন, এ সময় তিনি ঋণ সালিশী বোর্ড গঠন করেন
এর ফলে দরিদ্র চাষিরা সুদখোর মহাজন কবল থেকে রক্ষা পায়” বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা
উচ্ছেদের পদক্ষেপ তিনি গ্রহণ করেন,
এর কার্যকারিতা
পরীক্ষা করার জন্য ব্রিটিশ সরকার 1938 সালে কমিশন গঠন করে 1938 সালের 18 আগস্ট বঙ্গীয়ও
প্রজাস্বত্ব আইন সংশোধনী পাস হয়’ জমিদারদের লাগামহীন অত্যাচার চিরদিনের জন্য বন্ধ
হয় 1939 সালের বঙ্গীয়ও চাকরি নিয়োগ বিধি প্রবর্তন করে,
হক মন্ত্রিপরিষদে
মুসলমানের জন শতকরা 50 ভাগ চাকুরী নির্দিষ্ট রাখার ব্যবস্থা করে এই বছরে চাষী ঘাতক
আইন সংশোধনী এনে ঋণ সালিশী বোর্ডকে শক্তিশালী করা হয়’ ক্লাউড কমিশনের সুপারিশ অনুসারে
1940 সালে হক হিসাবে আইনে পরিষদের মাহার্জনীয় আইন পাস করান,
এক বছরে দোকান
কর্মচারী আইন প্রণয়ন করে তিনি দোকান শ্রমিকদের সাপ্তাহে একদিন ছুটির ব্যবস্থা করেন
ও অন্যান্য সুবিধা প্রদানের নির্দেশ জারি করেন’ কৃষি আধুনিকায়নের জন্য ঢাকা রাজশাহী
এবং খুলনার দৌলতপুরে কৃষি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা
করা হয়”
ন্যায্য মূল্য
পাওয়ার লক্ষ্যে 1938 সালের পাট অধ্যাদেশ জারি করা হয়!
পাট চাষীদের জন্য
ন্যায্য মূল্য পাওয়ার লক্ষ্যে 1938 সালের পাট অধ্যাদেশ জারি করা হয়’ 1941 সালের
12 ডিসেম্বর আবুল কাশেম ফজলুল হক দ্বিতীয়বারের মতো মন্ত্রিপরিষদ গঠন করেন, শরৎচন্দ্র
বসু হিন্দু মহাসভার সহ-সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী সঙ্গে প্রগতিশীল পার্টি গঠন করে
তিনি সেই দলের নেতা হয়েছিলেন|
1940 সালের 23
শে মার্চ জিন্নাহর সভাপতিত্বে সভাপতিদের লীগের
অধিবেশন শুরু হয়’ এই দিন ফজলুল হক ইতিহাস বিখ্যাত লাহোর প্রস্তাব উপস্থাপন করেন,1940
সালের 22 থেকে 24 মার্চ লাহোরের ইকবাল পার্কে মুসলিম লীগের কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়|
এই কনফারেন্সের
বাংলার বাঘ আবুল কাশেম ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন’ তিনি তার পস্তাবে
বলেন হিন্দু সাম্প্রদায়িক বাস্তবতায় হিন্দু-মুসলিমের একসাথে বসবাস অসম্ভব’ সমাধান
হচ্ছে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে স্বাধীন অবস্থা রাষ্ট্র এবং
পূর্বাঞ্চলের দিগন্তে বাংলা ও আসাম নিয়ে নতুন আরেকটি স্বাধীন মুসলিম ভারসাম্য রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা হবে|
মোহাম্মদ আলী
জিন্নাহর চালাকির আশ্রয় নেন!
বর্তমানে যে পাকিস্তান
রাষ্ট্র তার ভিত্তি হচ্ছে লাহোর প্রস্তাব তাই 23 শে মার্চকে পাকিস্তানের প্রজাতন্ত্র দিবস হিসেবে পালন করা হয়,কিন্তু লাহোর
প্রস্তাব ফাঁস হওয়ার কয়েক দিন পরে মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর চালাকির আশ্রয় নেন|
তিনি বলেন প্রস্তাবিত
টাইপ করার সময় ভুল করে মুসলিম মাজোরিটি স্টেট লেখা হয়েছে আসলে হবে স্টেট জিন্নাহর
ধারণা ছিল,
দেনদরবার করে
দুইপাশে দুইটা পাকিস্তান প্রতিষ্ঠা করা যাবেনা| তাই স্টেটের এর জায়গায় স্টেট লিখে
একটা মুসলিম মাজোরিটি রাষ্ট্র করতে হবে’ জিন্নাহর চালাকির কারণে ফজলুল হক তার সাথে
পাকিস্তান আন্দোলনে সম্পৃক্ত হননি|
বাংলা ও বাঙ্গালীদের
শেষ রক্ষা হয়নি!
বাংলাকে ভাগ করার
পক্ষে শেরে বাংলার কোন সম্মতি ছিল না কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাংলা ও বাঙ্গালীদের শেষ রক্ষা
হয়নি 1947 সালে বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ভাগ হয়ে যায় অবিভক্ত বাংলার’ সর্ব ভারতীয়
বাঙালি পরিচয়টাকে সিন্দুকে ভরে বাংলা ভাগ হাওয়ায় শেরে বাংলার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতে
থাকে|
1947 সাল থাকে
1952 সাল পর্যন্ত শেরে বাংলা রাজনৈতিক ভাবে বেশ নিষ্ক্রিয় ছিলেন পাকিস্তান গঠিত হবার
পর থেকেই হক সাহেব ঢাকা হাইকোর্ট এ পুনরায় আইন ব্যবসা শুরু করেছিলেন| তিনি ঢাকা হাইকোর্ট
বারের প্রথম সভাপতি নির্বাচিত হন এবং 1951 সালে পূর্ব তিনি পাকিস্তানের অ্যাটর্নি জেনারেল
নিযুক্ত হন’1953 সাল পর্যন্ত এই পদে বহাল ছিলেন|
একে ফজলুল হকের
জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদ ছেড়ে দেন দায়িত্ব নেন পূর্ব বাংলা!
এবং 1952 সালের
মাতৃভাষা ভাষা আন্দোলনে এ.কে ফজলুল হক সবচেয়ে বেশি কৃতিত্ব ছিল এবং সমর্থন দেন এবং
1953 সালের প্রাদেশিক নির্বাচনের সময় এবং তার বাসভবনের ভিতরে কৃষক প্রজা পার্টির সকল
জনপ্রিয় কর্মীদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়ছে”
তার এই সম্মেলনে
দলের নাম উপর থেকে প্রজা শব্দটি একই বারে বাদ দিয়ে কৃষক শ্রমিক পার্টি নাম গঠন করা
হয়.এই পার্টির সভাপতির এ.কে ফজলুল হক দায়িত্ব গ্রহণ করেন|
1953 সালে 4 ডিসেম্বর
এ.কে ফজলুল হক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খান মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে নিয়ে গঠিত হয় যুক্তফ্রন্ট’2054 সালের
10 মার্চ দেশের সাধারণ নির্বাচনের তিনি যুক্তফ্রন্ট দলের নেতৃত্ব দিয়ে বিপুল ভোটে
জয়লাভ করেন,
1954 সালে 23
এপ্রিল এ.কে ফজলুল হক 4 সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন’ পরিষদ গঠিত হয় 15 ই মেয়ে
পূর্ণাঙ্গ মন্ত্রী পরিষদ গঠিত হয়| তৃতীয়বারের মতো বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেন
শেরে বাংলা একে ফজলুল হক’
কম আসাম জিতলেও
দল মত সাফি ব্যক্তিগতভাবে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তার কারণে সবাই একে ফজলুল হকের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর
পদ ছেড়ে দেন দায়িত্ব নেন পূর্ব বাংলা| এবং প্রধানমন্ত্রী হন
উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি
গুলি হল!
পূর্ব পাকিস্তানের
যুক্তফ্রন্টের 21 দফা কর্মসূচি ছিল যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিপরিষদকে এই 21 দফা বাস্তবায়নের
তৎপর হোন’ তাদের গৃহীত উল্লেখযোগ্য কর্মসূচি গুলি হল বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা
করার সুপারিশ, একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, ভাষা আন্দোলনের
শহীদদের স্মৃতিতে দিয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ,
বাংলা নববর্ষের
প্রথম দিন পহেলা বৈশাখকে সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বর্ধমান হাউস কি বাংলা ভাষা গবেষণা কেন্দ্রকে
বা বাংলা একাডেমি ঘোষণা করা,জমিদারি ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া,
পুনরায় গণপরিষদের
নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়!
এই সময় শেরে
বাংলা একে ফজলুল হক কলকাতা শহরে সফরে যান 1954 সালের 31 ই মে পাকিস্তানের গভর্নর জেনারেল
গোলাম মোহাম্মদ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা বাতিল করে গভর্নরের শাসন প্রবর্তন করেন,1955
সালের 5 ই জুন সংখ্যা সাম্যের ভিত্তিতে পুনরায় গণপরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং
কোয়ালিশন সরকার গঠিত হয়|
মুসলিম লীগের চৌধুরি মহাম্মদ আলি কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পরিষদ গঠন করেন এবং একে ফজলুল হক ছিলেন এই সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন বিরোধী দলের নেতা 1956 সালের 29 ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের শাসনতন্ত্র গৃহীত 23 শে মার্চ তা কার্যকর হয়,
এই সময়
একে ফজলুল হক পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ করে 83 বছর বয়সে
করাচি থেকে ঢাকা এসে 1956 সালের 24 মার্চ পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব
গ্রহণ করেন,
1958 সালের পহেলা
এপ্রিল পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তাকে গভর্নরের পদ থেকে অপসারণ করে 1958 সালের
গণঅভ্যুত্থানের তাকে গৃহবন্দি করা হয়, এর মাধ্যমে তিনি তাঁর 46 বছরের বৈচিত্র্যময়
রাজনৈতিক জীবন থেকে স্বেচ্ছায় অবসর গ্রহণ করেন|
1958 সালের
27 অক্টোবর আবুল কাসেম ফজলুল হকে পাকিস্তানের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পদক হেলালি ই পাকিস্তান খেতাব
দেওয়া হয়,
1962 সালের
27 এপ্রিল একে ফজলুল হক 28 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ!
1961 সালের
30 সেপ্টেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষকবিন্দু তাকে সংবর্ধনা জ্ঞাপন করেন
এবং তাকে তাকে হলের আজীবন সদস্যপদ প্রদান করা হয়, এই সংবর্ধনা সভাপতি তিনি আর কোন
জনসভায় যোগদান করেনি’
1962 সালের
27 মার্চ তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়’ তিনি প্রায় এক মাস চিকিৎসাধীন ছিলেন.
1962 সালের 27 এপ্রিল শুক্রবার সকাল 10:30 একে ফজলুল হক 28 বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন|
পরেরদিন 28 এপ্রিল 10:30 থেকে পল্টন ময়দানে তার জানাজা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়
তাকে সমাহিত করা হয়|
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
এর একই স্থানে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও খাজা নাজিমউদ্দিনের ও কবর রয়েছে| তাদের
তিনজনের সমাধিস্থল এর ইতিহাসের তিন নেতার মাজার নামে পরিচিত|
রেডিও পাকিস্তান
সেই দিন সব অনুষ্ঠান বন্ধ করে সারাদিন কোরআন পাঠ করে’ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রেখেছে
তার প্রতি সম্মান দেখানো হয় 30 এপ্রিল সোমবার পাকিস্তানের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও
স্কুল-কলেজে ছুটি ঘোষণা করা হয়